সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে হামলায় বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে যান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি সেকশন ঘুরে দেখেন। এ সময় সেখানকার তাণ্ডব দেখে কাঁদেন সরকারপ্রধান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিটিভির কর্মকর্তারা।

এসময় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন কেন্দ্রটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এছাড়া রাজধানীর রামপুরায় একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত বিটিভি ভবন ও বিটিভির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়। এর আগে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিটিভি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাণ্ডবলীলায় বিভিন্ন অবকাঠামো, সম্প্রচার সরঞ্জাম, নকশা বিভাগ, অফিস ভবন এবং কক্ষ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়।

ভাঙচুরের ঘটনায় ১৯৬৪ সাল থেকে সংরক্ষিত অমূল্য প্রাচীন জিনিস দিয়ে সজ্জিত একটি টেলিভিশন জাদুঘর এবং মুজিব কর্নার, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক, অভ্যর্থনা ও ওয়েটিং রুমের আসবাবপত্র, কম্পিউটার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক (এসি) এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া প্রায় ৪০টি কম্পিউটার, ১শ’ টি টেলিভিশন সেট এবং কম্পিউটার ল্যাবের আসবাবপত্র, প্রশিক্ষণ কক্ষ ও প্রিভিউ রুম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লিফট, নেটওয়ার্ক  সরঞ্জাম, সিসি ক্যামেরা ও মনিটরিং সেটও ভাঙচুর করা হয়।

btv

যানবাহন ভবন এবং শেড, ক্যান্টিন এবং নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ কক্ষ, একটি সম্প্রচার ওবি ভ্যানসহ ১৭টি গাড়ি, ২১টি মোটর সাইকেলে আগুন এবং নয়টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

এছাড়া অডিটোরিয়াম, লাউঞ্জ, ডিজাইন, মেক-আপ, ওয়ার্কশপ, গ্রাফিক্স রুম, স্টোর/ওয়ারড্রব রুম এবং ২০টি গ্রাফিকস কম্পিউটারও ভাঙচুর করা হয়।

নকশার শেড, স্টুডিওর ছাদ, দেয়াল, ভবন এবং নাগরিক অবকাঠামো, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং প্রায় ৭০টি এয়ার কন্ডিশনার (এসি), অফিসিয়াল আসবাবপত্র,পাঁচটি ফটোকপি মেশিন এবং প্রায় ৫০টি অফিসিয়াল কম্পিউটারও ভাঙচুর করা হয়।

btv-3

১০টি কম্পিউটার ওয়ার্ক স্টেশন, বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি, রেকর্ডিং ক্যামেরা, আলোর উৎস এই সম্পর্কিত সরঞ্জামসহ একশ’ মনিটরিং সেট, গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক ফাইল, শিল্পীর সম্মানী-সম্পর্কিত খাতা, ব্যাংকের চেক বই, ভাউচার, অডিট বিল ইত্যাদিও ভাঙচুর করা হয়।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দিন সকাল থেকে উত্তপ্ত ছিল রামপুরা-বাড্ডা এলাকা। বিটিভিতে প্রথম হামলা হয় বেলা ১১টার দিকে। এরপর ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় হামলার পর ৭টা ৪ মিনিটে সম্প্রচার বন্ধ এবং বিটিভি শাটডাউন করে স্টেশন ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চতুর্থ দফা হামলা হয়। হামলায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাটও চালানো হয়। এতে ২২ ঘণ্টা সম্প্রচার বন্ধ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই টিভি স্টেশনটির।